হারিয়ে যান ডুলাহাজারা সাফারী পার্কে
প্রতিক্ষণ ডেস্ক
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের অপরূপ লীলাভূমি কক্সবাজার জেলা। পাহাড়, পর্বত, ঝর্ণাসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক বৈচিত্র দিয়ে ঘেরা এই জেলাটি। এই জেলার চকরিয়া উপজেলাতেই ডুলাহাজারা সাফারী পার্ক অবস্থিত। এটি দেশের একমাত্র সাফারী পার্ক। বিলুপ্তপ্রায় ও বিরল প্রজাতি বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও বংশবৃদ্ধিসহ মানুষের চিত্ত বিনোদন, গবেষণা ইত্যাদি পরিচালনার লক্ষ্যে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক সংলগ্ন চকরিয়া উপজেলা এলাকায় স্থাপিত দেশের একমাত্র “ডুলাহাজারা সাফারী পার্ক” পর্যটকদের আকর্ষণীয় স্থানে পরিণত হয়েছে। এখানে রয়েছে কয়েক হাজার পশু-পাখী। সাফারী পার্ক ও চিড়িয়াখানার মধ্যে পার্থক্য হলো -সাফারী পার্কে পশুপাখী থাকে মুক্ত পরিবেশে আর দর্শনার্থীরা থাকে নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে।
কোথায় অবস্থিত
কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পূর্ব পার্শ্বে ডুলাহাজরা রিজার্ভ ফরেষ্টে মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য সম্বলিত বনাঞ্চলে সাফারী পার্কটি অবস্থিত।
সাফারী পার্ক কী
সাফারী পার্ক হলো সরকার ঘোষিত এলাকা যেখানে বণ্যপ্রানীদেরকে তাদের প্রাকৃতিক পরিবেশে প্রতিপালন করা হয়। এর মধ্যে দেশী-বিদেশী বন্য প্রাণীর বংশবৃদ্ধি ও অবাধ বিচরণের সুযোগ থাকে এবং যাতে পর্যটকগণ পায়ে হেঁটে বা যানবাহনে ভ্রমণ করে টিকিটের বিনিময়ে শিক্ষা, গবেষণা ও চিত্তবিনোদনের সুযোগ থাকে। সাফারী পার্ক চিড়িয়াখানা থেকে ভিন্নতর। চিড়িয়াখানায় জীব-জন্তু আবদ্ধ অবস্থায় থাকে আর সাফারী পার্কে মুক্ত অবস্থায় বিচরণ করে।
দেখতে পাবেন
কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পূর্ব পার্শ্বে ডুলাহাজরা রিজার্ভ ফরেষ্টে মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য সম্বলিত বনাঞ্চলে সাফারী পার্কটি অবস্থিত। এটি ১৯৮০-৮১ সালে হরিন প্রজনন কেন্দ্র হিসাবে চালু হয়েছিল। বর্তমানে এটি জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের জন্য নানা রকম বুনো জীবজন্তুর নির্ভয় আবাস স্থল এবং ইকো-ট্যুরিজম ও গবেষণার পাশাপাশি বিনোদন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। এর আয়তন ৯০০ হেক্টর। এখানে বুনো জীব জন্তুর অবাধ চলাফেরা পর্যটকগণ উপভোগ করতে পারেন। এই পার্কে তথ্য শিক্ষা কেন্দ্র, প্রাকৃতিক ঐতিহাসিক জাদুঘর,পরিদর্শন টাওয়ার এবং বিশ্রামাগার রয়েছে। কক্সবাজার জেলা সদর হতে উত্তরে পার্কটির দূরত্ব ৫০ কি:মি: এবং চকরিয়া সদর হতে দক্ষিণে ১০ কি:মি:। এর আয়তন প্রায় ৯০০ হেক্টর।
প্রাকৃতিক শোভামণ্ডিত নির্জন উঁচু নিচু টিলা,প্রবাহমান ছড়া,হ্রদ,বিচিত্র গর্জন এর মত সু-উচ্চ ঐতিহ্যবাহী প্রাকৃতিক বৃক্ষ চিরসবুজ বনের জানা-অজানা গাছ-গাছালি,ফল-ভেষজ উদ্ভিদ,লতার অপূর্ব উদ্ভিদের সমাহার ও ঘন আচ্ছাদনে গড়ে উঠেছে সাফারী পার্ক। এর ছায়া ঘেরা পথ,সবুজ বনানী, জানা-অজানা গাছের সারি, পাখি আর বানরের কিচিরমিচির সবকিছূ মিলিয়ে যেন এক অসাধারণ অনুভূতি। পথের ধারে উচু ওয়াচ টাওয়ারে দাড়িয়ে আপনি দেখতে পাবেন পুরো পার্কের সীমানা পর্যন্ত অপার সৌন্দর্য। পার্কের চারদিকে বেষ্টনী রয়েছে যাতে বন্যপ্রানী পার্কের বাইরে যেতে না পারে। পার্কের ভিতরে আভ্যন্তরীন বেষ্টনীও রয়েছে। আভ্যন্তরীন বেষ্টনীর ভিতরে বাঘ,সিংহ ও তৃণভোজী প্রাণী প্রাকৃতিক পরিবেশে বসবাস করে। শুধু তাই নয়, পুরো পার্কে দেখতে পাবেন বিভিন্ন প্রানীর ভাস্কর্য যা আপনাকে মুগ্ধ করবে।
সাফারী পার্ক সম্পর্কে অতি অল্প সময়ে এক পলকে এর বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে ধারনার জন্য রয়েছে প্রধান ফটকের বাম পাশে ডিসপ্লে ম্যাপ। পর্যটকদের পার্কের ভিতরে অনায়াসে বাঘ-সিংহসহ অন্যান্য প্রাণী পর্যবেক্ষণ করার জন্য পর্যবেক্ষণ টাওয়ার, প্রহরা পোষ্ট রয়েছে। এখানে পার্কের নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থা আছে,আপনি চাইলে বাসে করে ঘুরে ঘুরে পুরো পার্কটি দেখতে পারবেন। তবে পায়ে হেটে পুরো পার্কটি ঘুরে দেখাই উত্তম। পার্কে ঢুকেই হাতের বামে ও ডানে দুটি রাস্তা চলে গেছে। বাম পাশের রাস্তা ধরে হাটা শুরু করলে পুরো পার্কটি ঘুরে আপনি অনায়েসেই ডান পাশের রাস্তা দিয়ে বেরিয়ে আসতে পারবেন।
যেভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে হানিফ, শ্যামলী, মর্ডাণ পরিবহনে করে কক্সবাজার যেতে হবে। আপনি চাইলে চট্টগ্রাম থেকেও যেতে পারেন। কক্সবাজার শহর থেকে সিএনজি চালিত অটোরিক্সা কিংবা মাইক্রোবাস অথবা পাবলিক বাসে করে যেতে পারেন সাফারী পার্কে।
কোথায় থাকবেন
আপনাকে থাকতে হবে কক্সবাজারের কোন একটি হোটেলে। কক্সবাজার হোটেল সম্পর্কে বিস্তারিত বলার কোন প্রয়োজন নেই। পুরো শহর যেন হোটেলের শহর। আপনার সুবিধামত যে কোন একটিতে থাকতে পারেন।
অনুমিত খরচ
বাস ভাড়া
ঢাকা – কক্সবাজারঃ ৪৫০ থেকে ১২০০ টাকা
কক্সবাজর – সাফারীপার্ক (সিএনজি): ৬০০ – ৮০০ টাকা
কক্সবাজার – সাফারী পার্ক (মাইক্রোবাস): ১৫০০ – ২০০০ টাকা
কক্সবাজর – সাফারীপার্ক (পাবলিক বাস): ৫০ টাকা
প্রবেশ ফি ও অন্যান্য
সর্বসাধারণের জন্য প্রবেশ ফিঃ ১০ টাকা
ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য প্রবেশ ফিঃ ৫ টাকা
বিদেশীদের জন্য প্রবেশ ফিঃ ৫ টাকা
গাড়ী পাকিং: ২০ টাকা
প্রতিক্ষণ/এডি/এফটি